ফের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চর্চা চলছে গোটা রাজ্য জুড়ে। স্কুলে গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে আদালত। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির দায় নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর মধ্যে কার্যত শুরু হয়েছে দায় ঠেলাঠেলি।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, ২০১১ সালে রাজ্যে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষামন্ত্রী হন ব্রাত্য বসু। তারপর ব্রাত্য বসুকে সরিয়ে শিক্ষামন্ত্রী করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সেই থেকে ২০২১ অবধি টানা শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থই। এ বছর তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা দফতরে ফিরিয়ে আনা হয় ব্রাত্য বসুকে।
কিন্তু, স্কুলে গ্রুপ ডি নিয়োগে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার দায় কার? তা নিয়ে এখন নাম না করেই পরস্পরের কোর্টে বল ঠেলছেন প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কার্যত দায় ঠেলে দেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর দিকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'গ্রুপ ডি নিয়োগের ব্যাপারটা শিক্ষা দফতর বলবে।' এদিকে, ব্রাত্য বসু মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ঘটনা তাঁর সময় ঘটেনি। তিনি বলেন, '২০১৬-র বিষয়। এটা তো আমাকে খোঁজ নিতে হবে। আমি তো তখন ছিলাম না। কমিশনকে বলেছি, আদালত যা তথ্য চাইছে দিয়ে দিন। এটা সার্বিকভাবে সংস্থার প্রতি অনাস্থা নয়। এটা নিয়োগ নিয়ে অনাস্থা। আমি তো ছিলাম না, কী করে জানব? নিশ্চয়ই কিছু সমস্যা ছিল, আছে।'
উল্লেখ্য, স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি বা গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় নতুন মোড়। এর আগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। এ বার আঙুল উঠল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দিকেও। দুর্নীতি করে ২৫ নয় প্রায় ৫০০ জনের বেশি নিয়োগ করা হয়েছে আদালতে দাবি করলেন মামলাকারীরা। বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা-সহ তালিকা আদালতে জমা দিতে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে প্রায় ১৩ হাজার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে রাজ্য। সেই মতো পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ নেয় সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন। তারপর প্যানেল তৈরি করে।
বুধবার এসএসসি সচিব হাই কোর্টে উপস্থিত হন। এসএসসির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ওই ২৫ জন চাকরি পান। কীভাবে চাকরি পেলেন তাঁরা, সে সংক্রান্ত প্রশ্ন করে হাই কোর্ট। নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হয়। তবে উপযুক্ত নথিপত্র পেশ করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে এসএসসি সচিবকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি। তিনি বলেন, "সিআইএসএফ দিয়ে অফিস তল্লাশি করাব? নিয়োগে দুর্নীতি কোনওভাবেই বরদাস্ত নয়।" দুপুর তিনটের মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টে ওই ২৫ জনের নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট।
তবে দুপুর তিনটের পর পাওয়া তথ্যে উষ্মাপ্রকাশ করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি। ওই ২৫ জন 'ভুয়ো' চাকরিরতের বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। 'ভুয়ো' চাকরিরতকে মামলার পক্ষভুক্ত করারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। আগামিকাল দুপুর ২টোয় ফের এই মামলার শুনানি হবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন