শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে একের পর অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। আদালতে দায়ের হয়েছে মামলা। নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এই অনিয়মে নাম জড়িয়েছে একাধিক নেতা-মন্ত্রী ও আধিকারীকদের। এবার স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ দুর্নীতিতে উঠে এল আরও বড় অনিয়মের চিত্র। অভিযোগ, শিক্ষক বদলির আড়ালে শূন্যপদে দেদার অবৈধ নিয়োগ করেছেন শিক্ষা দফতরের পদস্থ কর্তারা। সিপিআইএমের মুখপাত্র গণশক্তির প্রতিবেদন এমন খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের শিক্ষা সচিব মণীষ জৈনের বিরুদ্ধে উঠে আসছে একাধিক অভিযোগ। তাঁর জারি করা একাধিক নির্দেশিকা দুর্নীতিতে সহায়ক হয়েছে বলে উঠে এসেছে সেই প্রতিবেদনে।
২০২০ সালের শুরুতে রাজ্যে শিক্ষক বদলি নিয়ে শুরু হয় চূড়ান্ত তৎপরতা। বছরের পর বছর যাদের বদলি আটকে ছিল তারা রাতারাতি বাড়ির কাছে পছন্দের স্কুলে বদলি হতে শুরু করেন। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ার আড়ালে অবৈধ নিয়োগের পরিসর তৈরি করা হচ্ছিল বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সেখানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীষ জৈন একটি নির্দেশিকা জারি করেন। গোপন সেই নির্দেশিকার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল মুখ্যসচিব, শিক্ষামন্ত্রী নিজস্ব সচিব ও শিক্ষা দফতরের কমিশনারের কাছে। তবে তার প্রতিলিপি জেলায় পৌঁছয়নি। সেই নির্দেশিকায় জানান হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক ইচ্ছায় স্কুল শিক্ষকদের বাড়ির কাছের স্কুলে বদলি করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকরা যাতে পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেন সেজন্যই এই উদ্যোগ বলে জানান হয়। সেজন্য রাজ্যের সমস্ত সরকার অনুমোদিত স্কুলে শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষা দফতরের কমিশনারকে।
এর পরই শুরু হয় করোনা মহামারির জেরে লকডাউন। তারই মধ্যে স্কুলগুলিকে শিক্ষকদের তথ্য দেওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরের তরফে চালু করা হয় একটি পোর্টাল। তাতে কোন স্কুলে কত অনুমোদিত পদ রয়েছে। শূন্যপদের সংখ্যা কত তা জানাতে বলা হয়। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা ওই পোর্টালে তথ্য দ্রুত আপলোড করার জন্য প্রবল চাপ দিতে থাকেন। এমনকী রাত ১০টায় সহকর্মীদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সিং করেন শিক্ষাসচিব।
আইন অনুসারে রাজ্যে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলির দায়িত্ব স্কুল সার্ভিস কমিশনের। শিক্ষা দফতরের এব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপের অবকাশ নেই। সেসবের পরোয়া না করেই শিক্ষা দফতর পোর্টাল খুলে স্কুলগুলিতে শূন্যপদের সংখ্যা সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ। এমনকী যে তথ্য একবার পোর্টালে আপলোড হয়ে যেত তা শিক্ষা দফতরের হাতে গোনা কয়েকজন কর্তা ছাড়া আর কেউ দেখতেও পেতেন না।
স্কুলগুলির শূন্যপদের তালিকা যখন শিক্ষা দফতরের হাতে তখন ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর আরও একটি নির্দেশিকা জারি করেন শিক্ষাসচিব। তাতে বলা হয়, SSC-র কাছে পরিকাঠামো না থাকায় এবার থেকে স্কুল শিক্ষকদের বদলি নিয়ন্ত্রণ করবেন স্কুল শিক্ষা দফতরের কমিশনার। যা স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইন বিরোধী বলে দাবি। এর পর লকডাউনের মধ্যেই বিকাশ ভবনে বসে ৮,০০০ শিক্ষকদের বদলি করেন শিক্ষা দফতরের কমিশনার। অভিযোগ, বদলির জেরে তৈরি হওয়া শূন্যপদে র্যাঙ্ক জাম্প করিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে অযোগ্যদে।
গণশক্তির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'একদিন পোর্টালে কোনও সমস্যার জন্য শূন্যপদের সংখ্যা দেখা যাচ্ছিল না। বিকাশ ভবন থেকে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা ফোন করে জানতে চান একটি স্কুলে শূন্যপদ আছে কি না। স্কুল থেকে জানতে পারি সেখানে শূন্যপদ রয়েছে। আধ ঘণ্টার মধ্যে সেই পদ পূরণ হয়ে গিয়েছিল।'
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের শিক্ষাসচিব মণীষ জৈনকে যে কোনও দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে সিবিআই। তিনি কী ভাবে চার বছর ধরে ওই পদে রয়েছেন প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নিয়েও।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন