এবার সিবিআই হানা মধ্যশিক্ষা পর্ষদে; চাকরি খোয়াতে পারেন আরও কয়েক হাজার শিক্ষক

 

সিবিআইয়ের তদন্তের গতি নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি। এর পরেই শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির মামলায় সক্রিয়তা শুরু করল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এবার তারা হানা দিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদেও। মূলত গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্তেই তাঁদের এই অভিযান। বৃহস্পতিবার সকাল 

সওয়া ন-টা নাগাদ তদন্তকারী অফিসার এবং একজন ডিএসপির নেতৃত্বে ছ-জনের দল পর্ষদের সদর দফতর নিবেদিতা ভবনে হানা দেয়। তবে, পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের নাগাল সহজে পায়নি সিবিআই। অনেক কাণ্ডের পর অবশ্য সন্ধ্যার আগে তাঁকে বাড়ি থেকে কার্যত তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 

সূত্রের খবর, এদিন দু-টি গাড়িতে করে সিবিআই আধিকারিকরা পর্ষদে আসেন। তখন কল্যাণময়বাবু সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। কম্পিউটার অপারেটর রাজেশ লায়েক এবং ডেপুটি সেক্রেটারি (অ্যাডমিন) পারমিতা রায়ের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। কথা বলা হয় প্রীতম দাস নামে আরেক কম্পিউটার অপারেটরের সঙ্গেও। সার্ভার রুমে তল্লাশি এবং অন্যান্য নথিপত্র খতিয়ে দেখে গোটা টিম।

ইতিমধ্যে সিবিআই আধিকারিকদের তরফে বার বার ফোন যায় কল্যাণময়বাবুর কাছে। তদন্তকারীদের দাবি, পর্ষদ সভাপতি  বারবার বলেছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকবেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়েও তিনি আসেননি। সিবিআইয়ের কাছে তথ্য আসে, কল্যাণময়বাবুর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দক্ষিণ কলকাতা থেকে হাইকোর্ট চত্বর, সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি দেখা গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এক কর্মীর ফোন থেকে ফোন করিয়ে বাইপাস কাদাপাড়ার কাছে পর্ষদ সভাপতির বাড়িতে তাঁর উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন আধিকারিকরা। একটি দল গিয়ে কল্যাণময়বাবুকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। এবার বাকি তিনজনের সঙ্গে বসিয়ে একদফা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে উঠে আসে এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার নাম। তখন বাকিদের সামনে রেখে তাঁর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন আধিকারিকরা। সিবিআইয়ের অন্য একটি দল শান্তিপ্রসাদবাবুর বাড়ি হাজির হয়। সেখানে সস্ত্রীক তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্ধ্যার দিকে কল্যাণময়বাবুকে একা দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন আধিকারিকরা। রাতের দিকে নীল রঙের অন্য একটি গাড়িতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পাশের গেট দিয়ে বেরিয়ে যান পর্ষদ সভাপতি। তাঁর গাড়িটি বেরয় বিদ্যুৎ ভবনের গেট দিয়ে। 

সিবিআই সূত্রে আরও খবর, ২০২০ সালের ১৭, ১৯ এবং ২০ মার্চ যে নিয়োগপত্রগুলি ছাড়া হয়েছিল, তা কল্যাণময়বাবুই তুলে দেন শান্তিপ্রসাদ সিনহার হাতে। তিনি নাকি পর্ষদ সভাপতিকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, এসএসসির নতুন কার্যালয় থেকে সেগুলি ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তদন্তকারী অফিসারদের অবশ্য দাবি, নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশগুলি উপদেষ্টাই পাঠান কল্যাণময়বাবুর কাছে। পর্ষদ সভাপতির নির্দেশমতো সেগুলি স্ক্যান করেন দফতরের এক কর্মী। সেই কপি হাতে আসার পর ভুয়ো নিয়োগপত্র তৈরির জন্য নামের তালিকা রাজেশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিনি সেগুলি পাঠিয়ে দেন পর্ষদ সভাপতির কাছে। পরে এই নিয়োগপত্র যায় শান্তিপ্রসাদবাবুর কাছে। তিনিই আবার সেগুলি কল্যাণময়বাবুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করতে এদিন সকলকে জেরা করেন তদন্তকারীরা। কল্যাণময় এবং শান্তিপ্রসাদবাবু দু-জনেই অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। দু-জনের যাবতীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, সম্পত্তির নথি জমা নিয়েছেন তদন্তকারীরা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বেনামী সম্পত্তি থাকার বিষয়টিও। প্রয়োজনে তাঁদের আবার জেরা করা হবে বলে ইঙ্গিত সিবিআই সূত্রে।