কিছুদিন ধরেই শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলের কথা সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংক্রান্ত একটি খসড়াও প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও বিষয়টি এখনও রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া বাকি রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর এই নিয়েই বিগত কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ শুরু করেছে রাজ্যের বিরোদী রাজনৈতিক দল গুলি। অভিযোগ উঠছে, রাজ্য সরকার নাকি শিক্ষা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ করার চেষ্টা করছে। অথচ এই পিপিপি মডেলের বিষয়টি সম্পর্ক রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য একেবারে ভিন্ন। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি বিষয়টি জানেনই না। বললেন, "কেন পিপিপি মডেল ঘুরছে, আমি জানি না। এটি ভুয়ো কি ভুয়ো নয়, তা পরে জানাব। আমাদের দফতরে এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করব কিনা ভাবছি।" এর পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, "তিন দিন ধরে ঘুড়ছে বিষয়টি। এটি দেখতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। তবে আমরা আমাদের কাজ করে যাব।"
প্রসঙ্গত, স্কুল শিক্ষা থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে রাজ্য! শিক্ষাক্ষেত্র থেকে এবার হাত গুটিয়ে আগ্রাসী বেসরকারিকরণের পথে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। বেসরকারি বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে সরকারি শিক্ষাঙ্গনের জমি, বিল্ডিং সহ অন্যান্য পরিকাঠামো তুলে দেওয়া হবে। পিপিপি মডেলে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে কীভাবে তুলে দেওয়া হবে তার জন্য খসড়া নীতি তৈরি করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।
এমনই খবর মিলছে। গত ২ডিসেম্বর নবান্নে এসে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করে গিয়েছিলেন আদানি গ্রুপের প্রধান গৌতম আদানি। গৌতম আদানির পর গত ১০ফেব্রুয়ারি নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন আদানি পুত্র করণ আদানি।
এরাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ঘটনা হলো, ২০০৩সাল থেকে আদানি গোষ্ঠী শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করে। ‘আদানি বিদ্যা মন্দির’ শিক্ষাক্ষেত্রে আদানি গোষ্ঠীর নয়া বিনিয়োগের ক্ষেত্র। আদানিদের হাতে রাজ্যের সরকারি শিক্ষাঙ্গনকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে রাজ্য।
ইতিমধ্যেই ৭৯টি জুনিয়ার হাই ও হাই স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসাবে পড়ুয়ার সংখ্যাকে সামনে এনেছিল সরকার। শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বদলি করে দেওয়া হয়েছিল অন্য বিদ্যালয়ে। এখন সরকার ঠিক করেছে, স্কুলের বাড়ি আর জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। সেই সরকারি সম্পত্তির এখন হাত বদল হয়ে যাবে বেসরকারি হাতে।
খসড়া নীতিতে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেবে জমি, বাড়ি। বেসরকারি সংস্থাকে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ও বাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য সময়ে সময়ে প্রস্তাব তৈরি করবে। যার মূল উদ্দেশ্য হিসাবে স্পষ্টতই বলে দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পিপিপি মডেলে স্কুল তৈরির জন্য সরকারের তরফে প্রস্তাব (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) আসার পর বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাতে অংশগ্রহণ করবে। কাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সরকারি স্কুলের জমি ও বাড়ি তা ঠিক করার সময় বিনিয়োগে আগ্রহী সংস্থার শিক্ষাজগতে কাজের গুণগত মান ও আর্থিক ক্ষমতা বিচার করবে সরকার। ৮০শতাংশ প্রযুক্তিগত দিকের সঙ্গে ২০শতাংশ আর্থিক সক্ষমতা থাকলেই সরকারি সম্পত্তি তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে।
নিয়োগের দুর্নীতিতে জর্জরিত হলেও এরাজ্যে এখনও শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব পালন করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব থেকেও হাত তুলে নেবে সরকার। খসড়া নীতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্কুল চালাতে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য নিয়োগের দায়িত্ব পালন করবে বেসরকারি সংস্থাই। রাজ্যের চালু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এখনই নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ করার চল আছে। এরপর একদিকে যেমন সরকার শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেবে, তেমনই সামান্য অর্থের বিনিময়ে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বাধ্য করা হবে শিক্ষাদানে। পিপিপি মডেলে স্কুলে কত শিক্ষক নিয়োগ হবে তার সংখ্যাও ঠিক করার দায়িত্ব বর্তানো হয়েছে বিনিয়োগকারীদের ওপরই।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন